হযরত রকীব শাহ্ (রঃ এর সহধর্মিনী

মরমী কবি

হাজী আরিজা খাতুনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

সূফী সাধক ও মরমী কবি রকীব শাহের সহধর্মিনী হাজী আরিজা খাতুন উরফে আরিজুন্নেছা খাতুন সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার পরগ্রামে ১৯১২ ইংরেজীর ১৫ই ফেব্রæয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী রাশিদ আলী ও মাতার নাম খতিজা বিবি। তাঁহার পূর্ববর্তী বংশধরগন তরফের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি সিলেট সদরের লালাবাজারস্থ হযরত লতিফ (রঃ) এর নিকট বয়েত হন। আরিজা খাতুনের মাতা খতিজা বিবিও হযরত লতিফ (রঃ) এর মুরিদ ছিলেন। এখানে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন হযরত রকীব (রঃ)ও হযরত লতিফ শাহ (রঃ) এর মুরিদ ছিলেন।

হাজী আরিজা খাতুন ১৯৮০ সনে প্রথমবার এবং ১৯৮৩ সনে আরেকবার হজব্রত পালন করেন। তিনি বেশ কয়েকবার উমরাহ হজ্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি কয়েকবার ইংল্যান্ড সফর করেন। ১৯৯৫ ইংরেজীর নভেম্বর মাসে তিনি আজমীর শরীফে গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করেন।

১৯৫০ এর দশকে রচিত হাজী আরিজা খাতুনের একটি পান্ডুলিপি থেকে ৯টি গান ও অন্যান্য সময়ে রচিত গানগুলো থেকে আরো ৬টি গান, মোট ১৫টি গান নিয়ে ১৯৯৬ইং সনে কবির জীবদ্দশায় “বিনয় করে কাতর সুরে” নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ আরিজা খাতুনকে এভাবে মূল্যায়ন ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন- “তিনি সু-প্রসিদ্ধ তাপসী রাবেয়া বসরীরই অনুসরণ করেছেন। তবে তাদের মধ্যে তফাৎ এই- রাবেয়া বসরী ছিলেন চিরকুমারী এবং নানাভাবে নির্যাতিতা হয়েও আল্লাহর প্রতি তার প্রেমের দৃঢ়তা ত্যাগ করেননি। আরিজা খাতুন সংসার ধর্ম পালন করেও তার স্বামীর মত মারিফতের এক পর্যায়ে অগ্রসর হয়েছেন। তার রচনা থেকে বুঝা যায় তিনিও একজন উচ্চ পর্যায়ের সূফীয়া হয়েই বিরাজ করছেন। বাংলা ভাষায় মহিলা কবির আধ্যাতিœক বিষয় সংক্রান্ত রচনার প্রাচুর্য নেই। এজন্যে তার এই উদ্যম সমঝদার মহলে আশা করি নিশ্চয়ই প্রশংসা লাভ করবে”।

সু-পরিচিত কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মোস্তফা কামাল তার নিবন্ধে লিখেছেন- “সিলেটের মরমী সাহিত্যের অব্যাহত ধারায় চতুর্থ মহিলা মরমী কবি হিসেবে হযরত শাহ সৈয়দ আব্দুল লতিফ জালালাবাদী চিশতি নিযামী (রঃ)’র শিষ্যা এবং শাহ সূফী কাজী আব্দুর রকীব (রঃ)’র স্ত্রী আরিজা খাতুনের নাম করা যেতে পারে। আরিজা খাতুনের মূল বাড়ীও ‘তরপ’ এবং তাঁর দাদাপীর সৈয়দ শাহ ইজাহার আলী উরফে সৈয়দ ছানা উল্লাহও ছিলেন কুতুবুল আউলিয়ার বংশধর এবং তরপের চন্দ্রচুরি হাবেলীর বাসিন্দা। উল্লিখিত চারজন মহিলা মরমী কবিই তাদের স্বামী, ভাই ও মুর্শিদের দ্বারা প্রভাবিত। এরা সকলেই স্বভাব কবি। সৎসঙ্গীর প্রভাবে তারা ভাব রাজ্যের বাসিন্দা”।

সু-সাহিত্যিক মনির উদ্দীন চৌধুরী বলেন “মুর্শিদ ভক্ত আশিক আরিজা শয়নে স্বপনে নিশি জাগরণে মুর্শিদ প্রেমে মশগুল ছিলেন। স্বামীর সান্নিধ্য আরিজা খাতুনকে মরমী সংগীত রচনায় আগ্রহান্বিত করেছে।”

মরমী কবি আরিজা খাতুনের সমাধি, কাজীটুলা সিলেট।